ভুটান ও ভারত থেকে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ দিয়ে আসবে ৬০ টি পণ্য।

0
53

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ চালুর মধ্য দিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে- এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে অনুমতি মিলেছে ভুটানে উৎপাদিত সব (সুতা ও আলু ব্যতীত) পণ্য ও ভারতের ৬০টি পণ্য। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব ধরণের পণ্য উল্লেখিত রেলপথ দিয়ে রপ্তানি করা যাবে । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এর এক প্রজ্ঞাপন থেকে আমদানির-রপ্তানির এ তথ্য জানা গেছে। গত ৩১ অক্টোবর এ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আরো চারটি পণ্য আমদানির অনুমতি মিলেছে।

এসব পণ্য হচ্ছে, ভুসি, ডাল, বুট ও বাঁশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারির কারণে ব্যবসায়িদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। রেলপথের আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ হলে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা। আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ি মো. মনির হোসেন বাবুল জানান, আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্য খেই হারিয়ে ফেলেছে। রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি মেলায় এখন বাণিজ্যে নতুন ধারা ফিরে আসবে ব্যবসায়িরা লাভবান হবেন। আমদানি বৃদ্ধি পেলে আমাদের নতুন অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে উঠবে। 

আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম  বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হলে দু’দেশের বাণিজ্যে আরো গতি বাড়বে। বিশেষ করে পাথর, গম, চাল আমদানি আমাদের সহজ হবে। ভারতের ট্রেন বাংলাদেশে চলে আসবে বলে কমে আসবে পরিবহন ব্যয়।ইতিমধ্যেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে ভারতের অংশে রেললাইনের কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত হয়ে দু’দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের উদ্বোধন হয়েছে বুধবার পহেলা নভেম্বর। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আরো একটি রেল যোগাযোগ স্থাপন হলো। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির

পরিচালক আল-মামুন জানান আখাউড়া-আগরতলা রেল যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়াটা আমাদের জন্য আনন্দের। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক গতি ফিরবে। আমরা উল্লেখযোগ্য পণ্য গুলি অন্য বন্দর দিয়ে রপ্তানির আশায় থাকতে হতো। রেলপথে আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আমরা আর অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে হবেনা। এই রেলপথে আমরা পণ্য আমদানি করলে পরিবহন করচ কমবে। পরিবহন খরচ কমে গেলে ভোক্তা পর্যায়েও তার সুফল আসবে৷ 

আনন্দ বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মিয়া বলেন আমরা এই রেলপথ দিয়ে চাল আমদানি করতে পারলে আমাদের জন্য লাভজনক পাশাপাশি ভোক্তারও লাভ হবে। আমরা বেনাপোল দিয়ে আমদানি করে আসাদের জেলা শহরে আনতে পরিবহন খরচ অনেকবেশি হয়ে যায়। এখন সস্তির বিষয় হলো আখাউড়া দিয়ে চাল আমদানি পরিবহন ব্যয় কমে গেলে চালের দামও কিছুটা ক্রয় করতে পারবে ভোক্তারা৷ 

কি ভাবছেন ভোক্তারা

৬০ পণ্যের আমদানিতে ভোক্তারাও বিষয়টিতে স্বাগত জানিয়েছেন। নীহার রঞ্জন সরকার একজন এনজিও প্রশিক্ষক তিনি জানান আখাউড়া-রেলপথে আমদানি অনুমোদন দেয়ায় আমরা সাধারণ মানুষ আনন্দিত। বিভিন্ন সময় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মজুত করে বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে ফেলেন। আমরা আশা করি এদিকে পণ্য আমদানি সহজ হলে সিন্ডিকেট মজুত করে তেমন সুযোগ নিতে পারবেনা। 

একটি বেসরকারি কোম্পানির একজন চাকুরী আসাদুজ্জামান পারভেজ জানান, বাজারে এখন আসার সময় আতংকে আসি। চাহিদা অনুযায়ী বাজার ক্রয় এখন কষ্টকর। তবুও আমরা আশাবাদী আমদানি আমাদের এদিকে হলে আমরা কিছুটা হলেও সস্তি পাবো। 

এদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মুখিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে সেখানকার ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ মনে করছে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে কলকতা হয়ে সেদেশের বিভিন্নস্থানে গেলে তাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাওয়াটা তাদের জন্য সহজ হবে। তবে এখনই এটা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা-কলকাতা ট্রেন চলাচল।

এ ক্ষেত্রে বাধা মিটার গেজ রেললাইন। কেননা, আখাউড়া থেকে ভৈরব পর্যন্ত ব্রডগেজ (ডুয়েল গেজ) হলেও ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরোটাই এখনো মিটার গেজ রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই পথটুকু ব্রডগেজ লাইনে পরিণত না করা হয় ততক্ষণ বাংলাদেশ হয়ে সরাসরি আগরতলা থেকে কলকাতা যাওয়া সম্ভব না। ভারতের অভ্যন্তরের পুরোটাই ব্রজগেজ বিধায় বাংলাদেশ থেকেও গাড়ি যাওয়া সম্ভব না।

আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু জাফরও জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আগরতলা থেকে কলকাতা ট্রেন চলাচল হুট করেই সম্ভব না। তবে এক্ষেত্রে আগে ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো অংশে ব্রডগেজ লাইন করতে হবে।

দুই দেশের এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬.৭৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ১৮ মাস। এরপর করোনার প্রভাবসহ নানা কারণে পাঁচ দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন নাগাদ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here